সমুদ্রজয়ী কলম্বাস/চতুর্থ অভিযান
চতুর্থ অভিযান
কলম্বাস চতুর্থ অভিযানে বেরিয়ে কিছুকাল মেক্সিকো-উপসাগরের দক্ষিণ দিক্ ধরে এগিয়ে যেতে লাগলেন...আবিষ্কারের মায়াজালে অজানা নূতন জগতের কত অজ্ঞাত রহস্য ধরা পড়তে লাগলো!
তারপর তিনি তীরে নেমে দেখ্লেন, উপনিবেশ স্থাপন করবার সমস্ত চেষ্টাই তাঁর ব্যর্থ হয়ে গিয়েছে। কয়েকজন মাত্র স্পেনিয়ার্ডকে নিয়ে তাঁর ছেলে দিয়িগো তখনো পিতার অপেক্ষায় বসে ছিল···চারিদিকে ইণ্ডিয়ানরা স্পেনিয়ার্ডদের যথেচ্ছ ব্যবহারে উত্যক্ত হয়ে আর তাদের সঙ্গে মিত্রতা করার কোন প্রয়োজন অনুভব করে না...
কলম্বাস দেখলেন, খাদ্যের অভাবে তাঁদের মারা পড়তে হবে...যদি ইণ্ডিয়ানদের সঙ্গে আবার সদ্ভাব ফিরিয়ে না আনতে পারেন। এই সময় এক অভিযানে জ্যামাইকার তীরে ভগ্ন-তরী অবস্থায় কোন রকমে সাঁতার দিয়ে তিনি জীবন রক্ষা করেন। কিন্তু দিনের পর দিন যায়, সপ্তাহের পর সপ্তাহ যায়, কোন সাহায্যের কোন চিহ্ন নাই! অবশেষে যখন উপবাসে দেহ প্রায় মুমূর্ষু হয়ে পড়েছে, সেই সময় তাঁর ছেলে তাঁকে সেই অবস্থা হতে উদ্ধার করে স্পেনে ফিরিয়ে নিয়ে আসে।
কলম্বাস আবার স্পেনে ফিরে এলেন···কিন্তু কোথায় সে অভিনন্দন, কোথায় সে মালা-চন্দন!
সকলের চেয়ে দুঃখের বিষয়, কলম্বাস ফিরে এসে শুনলেন যে রাণী ইসাবেলা পরলোক গমন করেছেন! তখন তাঁর আর কোন আশাই রইলো না। রাজা ফার্ডিন্যাণ্ড ক্রমশ-ক্রমশ কলম্বাসকে একেবারে ভুলেই গেলেন।
কলম্বাস যে-সব রাজ্য আবিষ্কার করেছিলেন, সেখানে স্পেনের রাজদণ্ড তখন পূরোমাত্রায় গিয়ে পৌঁছিয়েছে কিন্তু হায় হতভাগ্য বৃদ্ধ কলম্বাসের সংবাদ নেওয়া আর তখন কেউ প্রয়োজনীয় মনে করে না···রাণী ইসাবেলা তাঁর যে মাসিক বৃত্তির বন্দোবস্ত করে গিয়েছিলেন, অবহেলায় তা-ও ক্রমশ বন্ধ হয়ে গেল...
তার ফলে পৃথিবীতে···সুসভ্য য়ুরোপ···সেদিন যে কৃতঘ্ন বায়ুর তপ্ত প্রবাহ বয়ে গিয়েছিল, সে কথা মনে হলে আজও শ্বাস রুদ্ধ হয়ে যায়!
যে লোক অর্দ্ধ-পৃথিবীর সংবাদ এনে দিল, সেই লোকইএই লেখায় এই অংশে একটি চিত্র থাকা উচিৎ। যদি আপনি তা দিতে পারেন, তবে, দয়া করে সাহায্য:চিত্র দেখুন। |
সেদিন স্পেনের রাজপথে ভিখারীর মতন ঘুরে বেড়িয়েছিল···থাকবার জন্যে তার মাথার ওপর একটা ছাদ জোটে নি···খাদ্যের অভাবে তাকে সেদিন এক সরাইখানা থেকে আর এক সরাইখানায় ভিক্ষা করে বেড়াতে হয়েছে...
রাজা ফার্ডিন্যাণ্ড সেদিন কলম্বাসের দিকে ফিরেও চান নি...
এই ভাবে নিদারুণ অবজ্ঞা আর দারিদ্র্যের মধ্যে কলম্বাস ১৫০৬ খৃষ্টাব্দের ২০শে মে শেষবারের মত এমন এক মহা অভিযানে বেরোলেন, যে-অভিযান থেকে কোন মানুষই আর কোনদিন ফিরে আসে না।