সাহিত্যে প্রগতি/সাহিত্য ও সমাজ (২)
সাহিত্য ও সমাজ
(২)
পলাসীর যুদ্ধের পর, ইংরেজ শাসনের যুগ আরম্ভ হয়। এই যুগের রাজনীতিক-অর্থনীতিক কারণ বশতঃ দেশজ সভ্যতার ক্ষেত্রে বিদেশীয় তৎকালীন কৃষ্টি রোপিত হয়। এতদ্বারা ভারতীয় মনে ‘দ্বন্দ্বভাবের’ (antithesis) উদয় হয় এবং পরিণাম স্বরূপ একটা ‘সম্মিলন’ (Thesis) সৃষ্টি করিবারও প্রচেষ্টা হয়। এই কর্ম্মের জন্যই সমাজ শরীর মধ্য হইতে রামমোহন রায় ও তাঁহার দ্বারা স্থাপিত “ব্রহ্মসভা” রূপ প্রতিষ্ঠানের উদয় হয়। রামমোহন ফরাসীবিপ্লবের ইতিহাসের ছাত্র ছিলেন এবং তদ্বারা তিনি বিশেষ ভাবে অনুপ্রাণিত বলিয়া কথিত হয়। এই অনুপ্রেরণা দ্বারা তিনি পুরোহিততন্ত্রের বিরুদ্ধাচরণ করিয়াছিলেন বটে, কিন্তু তাঁহার প্রতিপাদ্য “ব্রাহ্মধর্ম্ম” এবং জীবনের কর্ম্ম দ্বারা ইহাই প্রতিপন্ন হয় যে তিনি সামন্ততান্ত্রিক অতীতকে ভুলেন নি এবং তাহার সহিত সম্বন্ধও বিচ্ছিন্ন করেন নি। তৎপর, “ব্রহ্মসভা” “ব্রাহ্মসমাজে” পরিণত হয়; এই সময়ে ইংরেজী শিক্ষিত একদল তরুণও দেশে উদিত হয়। ইঁহারা হালফ্যাসানের ইংরেজী সাহিত্যের সহিত পরিচিত হন এবং তৎকালীন ইংরেজী Unitarianism নামক ধর্ম্মমতবাদের সহিত পরিচিত হইতে থাকেন। ইংরেজী এই দলের সহিত পূর্ব্ব হইতেই রামমোহনের যোগ স্থাপন ছিল। ক্যালভিনের দলপ্রসূত এবং “পিউরিটান” নামে পরিচিত ইংরেজ সামাজিক দল হইতেই এই দলের উদ্ভব হয়। এই জন্য এই দলের আদর্শ ছিল “বুর্জ্জোয়া ডেমোক্রাসী”। এই মতের প্রভাব তৎকালীন এক দল শিক্ষিত বাঙ্গালী তরুণদের উপর প্রসারিত হয়। এই প্রকারের মধ্যবিত্ত শ্রেণীর যুক্তিবাদী তরুণদের নিয়া ৺অক্ষয়কুমার দত্ত ব্রাহ্ম সমাজের অন্তর্গত “আত্মীয় সভা” স্থাপিত করেন। পরে মতানৈক্য বশতঃ কেশবচন্দ্র সেনের নেতৃত্বে এই দলের অধিকাংশ যুবক পুরাতন ব্রাহ্মসমাজ হইতে বহির্গত হইয়া ‘ভারতবর্ষীয় ব্রাহ্মসমাজ’ স্থাপিত করেন। সেই সময় হইতে ব্রাহ্মসমাজের জীবন নূতন খাতে প্রবাহিত হইতে থাকে। এই সময়ে হ্যামিল্টনের মনস্তত্ত্বের Intuition মত, ইউনিটেরিয়ান সম্প্রদায়ের ধর্ম্মমত ও তৎকালীন প্রগতিশীল ইংরেজ ভাবুকদের রাজনীতিক ও সামাজিক মতবাদসমূহ বাঙ্গলার শিক্ষিত যুবকদের মনে বিশেষ ভাবে অঙ্কিত হইতে থাকে। এই ক্রিয়াস্বরূপ ব্রাহ্মসমাজ দ্বারা যে সাহিত্য সৃষ্ট হয় তাহা অতীতের সহিত সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়। ব্রাহ্মসমাজ সনাতন হিন্দুধর্ম্মের ধর্ম্মমত ও সামাজিক অনুষ্ঠানসমূহ ত্যাগ করিয়া নূতনরূপে নিজের জীবন গঠিত করিতে থাকে। কেশবচন্দ্র সেনের “নবসংহিতা” তাহার জাজ্জ্বল্যমান প্রমাণ। ব্রাহ্মসমাজকে বিশেষরূপে নিরীক্ষণ করিলে ইহাই উপলব্ধি হইবে যে ইহা ভিক্টোরীয় যুগের একটি ইংরেজী বুর্জ্জোয়া প্রতিষ্ঠানের ভারতীয় সংস্করণ মাত্র! ব্রাহ্মসমাজদ্বারা যে সাহিত্য সৃষ্ট হয় এই জন্যই তাহাতে আমরা সামন্ততান্ত্রিক যুগীয় গল্পের অবতারণা পাই না। তাহা দ্বন্দ্বপূর্ণ (polemical) প্রচারকর্ম্মের উদ্দেশ্যে লিখিত বলিয়া, তন্মধ্যে ধর্ম্ম ও সমাজ সংস্কারের কাহিনী পাওয়া যায়। পুনঃ, মধ্যবিত্তশ্রেণীর লোকসমূহদ্বারা ব্রাহ্মসমাজ সংগঠিত বলিয়া আমরা মধ্যবিত্তশ্রেণীর জীবনের চিত্র ইহাতে পাই। ৺শিবনাথ শাস্ত্রীর “যুগান্তর” নামক নভেল ইহার একটা দৃষ্টান্ত স্বরূপ বলিয়া উল্লেখ করা যায়। কিন্তু এতদ্বারা ইহা বলা যায় না যে ব্রাহ্ম সাহিত্য বুর্জ্জোয়া সাহিত্য। বুর্জ্জোয়া শ্রেণীর দৃষ্টিভঙ্গী ইহাতে নাই, যদিচ ইহা মধ্যবিত্তশ্রেণীর ব্রাহ্মসমাজ প্রসূত মধ্যবিত্তশ্রেণীর সংস্কারকের জীবনীর চিত্র সম্বলিত সাহিত্য। ব্রাহ্মসমাজের ছাপ ইহাতে আছে। তত্রাচ, ইহা প্রাচীনখাত হইতে বহির্গত হইয়া, সমাজের সম্মুখে নূতন আদর্শ প্রদর্শন করিয়াছে বলিয়া ইহাকে আপেক্ষিক প্রগতিশীল বলা যায়।
এই যুগে অন্যান্য লেখকেরাও উদ্ভূত হন। তাঁহারা স্বদেশপ্রেমিক সাহিত্যের সৃষ্টি করেন। রঙ্গলালের “পদ্মিণী” উপাখ্যান, অন্যান্যদের লিখিত “পুরুবিক্রম” নাটক, “বঙ্গাধিপ পরাজয়”, প্রভৃতি নাটকে তুর্কি-মুসলমানদ্বারা হিন্দুর পরাজয় কাহিনী চিত্রিত করিয়া স্বদেশপ্রেমের বন্যা বহাইয়াছিলেন। এই সঙ্গে আরব দ্বারা সিন্ধুদেশ আক্রমণ, আলেকজাণ্ডার দ্বারা ভারত-আক্রমণ উপলক্ষ করিয়া নানা স্বদেশপ্রেম পূর্ণ গানও রচিত হয়। পুনঃ, বর্ত্তমান অবস্থা উল্লেখ করিয়া “ভারত-বিলাপ” নাটক লিখিত হয় (পুলিশ ইহার অভিনয় বন্ধকরিয়া দিয়াছিল)। কিন্তু তৎকালীন শিক্ষিত হিন্দুর মনস্তত্ত্বে, প্রকাশ্য ভাবে ইংরেজ শাসনের বিপক্ষে দণ্ডায়মান হইবার সাহস হয় নাই বলিয়া অর্থাৎ নবোত্থিত হিন্দু বুর্জ্জোয়া সমাজ ইংরেজ শাসনের প্রতিদ্বন্দ্বী হয় নাই বলিয়া, তাহারা বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে পুরাতন ও বিস্তৃত যুগের বিদেশী মুসলমান বিজেতৃ বর্গের বিপক্ষে নিজেদের স্বদেশপ্রেমের ফোয়ারা ছাড়িয়া দিলেন। এই সূত্র ধরিয়াই পরে ভূদেব মুখোপাধ্যায়ের “স্বপ্নলব্ধ ভারতবর্ষের ইতিহাস” এবং বঙ্কিম চন্দ্রের “আনন্দমঠ” লিখিত হয়। ইঁহারা ভারতবর্ষ অর্থে “হিন্দু-ভারত”ই বুঝিয়াছিলেন, তাহার বাহিরে ইহাদের রাজনীতিক কল্পনা যাইতে পারে নাই। ইঁহারা প্রাচীন কালের বিদেশী মুসলমান ও দেশজ এবং হিন্দুর জ্ঞাতি মুসলমানের মধ্যে পার্থক্য দেখিতে পাননি। একটা ‘নেশান’ যে নানাপ্রকারের রাজনীতিক, জাতিতাত্ত্বিক ও সমাজতাত্ত্বিক ঘাতপ্রতিঘাতের সংজাত ফলস্বরূপ তাহা তাঁহারা উপলব্ধি করেন নাই। অবশ্য, এই জ্ঞান তৎকালীন ইউরোপেও বিশেষভাবে ছিল না, এখনও অনেকের মধ্যে নাই! “যেমন গুরু, তেমন শিষ্য”-রূপ ফল জনিত জ্ঞানদ্বারা তৎকালের হিন্দু লেখকেরা ‘একজাতিত্ব’ অর্থে একরক্ত ও একধর্ম্ম ও আচার সম্বলিত লোকসমষ্টিকে বুঝিতেন (এখনও অনেকে তাই বুঝেন)। অবশ্য এই যুগে “হালী” নামে বিখ্যাত মুসলমান কবিও নেশনের এই প্রকারের অর্থ বুঝিয়াছিলেন। যাহাই হউক, এইসব লেখক ইংরেজের বিপক্ষে কিছু বলিবার সাহস না থাকায় স্বদেশপ্রেমের বন্যার স্রোতে মুসলমানকে স্বদেশের শত্রু কল্পনা করিয়া, তাহার প্রতি নিয়োজিত করিয়াছিলেন। ফলে, তাঁহাদের স্বদেশপ্রেম আসলে “স্বধর্মীপ্রেমে” পর্য্যবসিত হয় এবং ভবিষ্যতে ইহার পরিণাম শুভ হয় নাই। এই সময়ের শেষভাগে দীনবন্ধু মিত্রের “নীল-দর্পন” লিখিত হইয়া নীলকরদের অত্যাচারের কাহিনী লোক সমাজের চক্ষুগোচর করা হয়। ইহাতে সামন্ততন্ত্রিক গতানুগতিক ধারা নাই, আছে বাস্তব ঘটনার উপর প্রতিষ্ঠিত নভেলাকারে লিখিত কাহিনী। এই পুস্তক আমেরিকার হ্যারিয়েট স্টো-র “Uncle Tom's Cabin” নামক নিগ্রো গোলামদের করুণ জীবনের কাহিনীপূর্ণ পুস্তকের তুল্য মানব সমাজের কল্যাণ সাধন করিয়াছে। এইজন্য এই পুস্তক ‘প্রগতিশীল’ বলিয়া গণ্য। পুনঃ “সধবার একাদশী” তৎকালীন কলিকাতার ধনী গৃহের অপদার্থ পুত্রের চিত্র, নিমচাঁদের ন্যায় শিক্ষিত অকর্ম্মণ্য ও মদ্যপের চিত্র অঙ্কণ করিয়া, দীনবন্ধু তৎকালের সমাজের একাংশের একটা চিত্র লোকের চক্ষুগোচর করিয়াছেন। আবার নাট্যাচার্য্য গিরিশচন্দ্র ঘোষের “বেল্লিক-বাজার” নামক নাটকে তৎকালীন ডাক্তার, উকিল, ধনী আর দু’কড়ির ন্যায় মদ্যপের জীবন অঙ্কণ করিয়া সমাজের একটী অন্তঃস্বলিলা ধারা লোকের সম্মুখে প্রকাশ করিয়াছেন। “গিরীশচন্দ্র, বর্ণিত বিষয়বস্তু তিনি প্রত্যক্ষ দর্শন করিয়া স্থানে স্থানে স্বল্পবিস্তর ত্যাগ করিয়া চরিত্রানুরূপে বর্ণনা করিয়াছেন” (শ্রীমহেন্দ্র নাথ দত্ত ‘গিরীশচন্দ্রের মন ও শিল্প’); ‘বেল্লিক-বাজার’এ যে দু’কড়ি সেনের কথা আছে, সেই ব্যক্তি বাস্তবিক কলিকাতার একজন মদ্যপ ছিল। ‘গিরিশচন্দ্র’, দু’কড়ি সেনের জীবনের ঘটনা চৌদ্দ আনা বাদ দিয়া দুই আনা হিসাবে তাহাকে ‘বেল্লিক-বাজারে’-এ অঙ্কিত করিয়াছেন। এই প্রকার “প্রফুল্ল” নাটকে তিনি তৎকালীন সামাজিক ঘটনার একটী চিত্র দিয়াছেন। যখন ইংরেজী সাম্রাজ্যবাদ ভারতে নিজের গভর্ণমেণ্ট চালু করিবার জন্য স্বীয় দেশানুযায়ী নানাপ্রকারের শিক্ষা বাঙ্গালীকে প্রদান করিয়া এতৎদেশীয় সমাজে মধ্যবিত্তশ্রেণীর উদ্ভব করায়, সেই সময়ে “ওকালতী” একটা বিশিষ্ট বৃত্তি রূপে গণ্য হয়। কিন্তু এই বৃত্তি অবলম্বন করিয়া অনেকে কি প্রকারে আইনের ফাঁকী দিয়া জুয়াচোর হইতে শিক্ষালাভ করেন, কি প্রকারে আইনের জুয়াচুরী দ্বারা আত্মীয়দের প্রবঞ্চনা করেন গিরীশচন্দ্রের “প্রফুল্ল” নাটক সেই সময়ের একটী সামাজিক চিত্র প্রদান করে। এই বিষয়ে গিরীশচন্দ্র নিজেই বলিয়াছেন, “না, সব চরিত্রই আমার নিজের চোখে দেখা। যোগেশ-চরিত্র সত্য ঘটনা। আমার কাছে ঐরূপ একজন ভদ্রলোক মাঝে মাঝে আসতো দু’চার আনা নিয়ে চলে যেত।তাহার জীবনের ঘটনা অনেকটা ঐরূপ ঘটেছিল (ঐ পূঃ ১৩)।”
এই সময়ের তারকচন্দ্র গাঙ্গুলীর “স্বর্ণলতা” সমাজের আর একটী চিত্র প্রকাশ করে। এই সব নভেল মধ্যবিত্তশ্রেণীর ও সাধারণের জীবনী অবলম্বনে রচিত হয়। এই গুলিতে realistic ছাপ আছে। এইগুলি সাময়িকভাবে প্রগতিশীল সাহিত্য বলিয়া গণ্য হইবে।
ইহার পর আসে হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় ও নবীন চন্দ্র সেনের কবিতা পুস্তক সমূহ। ইহাতে অনেক জাতীয়তাবাদী কবিতা আছে। কিন্তু পুস্তকগুলির প্রতিপাদ্য প্রাচীন কাহিনী এবং নূতন তথ্য সমূহ নাই। এইজন্য ইহাকে প্রগতিশীল বলা যায় না। অপর পক্ষে যোগেন্দ্রনাথ বিদ্যাভূষণের “আত্মোৎসর্গ চরিত্রাবলী”, “জীবনোচ্ছ্বাস”, ম্যাটসিনি, গ্যারিবল্ডি ও আর্নিটার জীবনী সমূহ দেশের তরুণদের সম্মুখে নূতন আলোক প্রদর্শন করে। এইগুলির রস ও রূপ অন্য প্রকারের এবং অসাম্প্রদায়িক ও সামন্ততান্ত্রিক ভাববিমুক্ত বলিয়া ইহা প্রগতিশীল সাহিত্য মধ্যে গণ্য হয়।
ইহার পর, বড় সাহিত্যিক হইতেছেন রবীন্দ্রনাথ। তাঁহার প্রতিভা জীবনের নানাক্ষেত্রে বিকশিত হইয়াছে। “রাজা ও রাণী”তে যেমন তিনি সামন্ততান্ত্রিক গল্পের অবতারণা করিয়াছেন এবং সেই যুগানুযায়ী রস ও রূপ প্রদর্শন করিয়াছেন, তদ্রূপ “গল্পগুচ্ছ” পুস্তকের গুটিকয়েক কাহিনী জনসাধারণের জীবনী অবলম্বন করিয়া লিখিত হইয়াছে। এইগুলি অপেক্ষাকৃত প্রগতিশীল বলিয়া গণ্য হইবে। অন্যপক্ষে “রক্ত-করবী”তে তিনি পুঁজীবাদের ভীষণ শোষণ চিত্র প্রদর্শন করিয়াছেন, কিন্তু তাহা হইতে বহির্গত হইবার উপায় তিনি দেখাইতে পারেন নি। এই স্থলে তিনি গণ্ডীবদ্ধ হইয়াছিলেন। তদ্রূপ “গোরাতে” তিনি প্রগতি প্রদর্শন করিতে পারেন নি। এইজন্য বলিতে হইবে যে, তাঁহার সাহিত্য বুর্জোয়া সাহিত্য মধ্যে গণ্য নয়।
তৎপরের বড় সাহিত্যিক ছিলেন শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। তাঁহার বেশীরভাগ নভেল গরীব মধ্যবিত্তশ্রেণীর জীবনী ও অভিজ্ঞতাবলম্বনে রচিত হয়। ইঁহার বৈশিষ্ট হইতেছে, স্ত্রীলোকের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা, তাহাদের তরফের কথা কিছু শুনান; আর গরীব মধ্যবিত্তশ্রেণীর (Petty bourgeoisie) মধ্যে যে মনস্তত্ত্বের বিকাশ চলিতেছে তাহা উদ্ঘাটন করা। এই জন্য এইসব পুস্তকে আমরা পূর্ব্বের সাহিত্যশ্রেণী অপেক্ষা নূতন সুর ও একটী নূতন স্তরের মনস্তত্ত্বের সহিত পরিচিত হই। কিন্তু তাঁহার শেষের “বিপ্রদাস” পুস্তকে সেই প্রগতির সুর আমরা শুনিতে পাই না। কেহ কেহ অনুমান করেন তাঁহার নবশ্রেণী লক্ষণ ইহাতে প্রতিফলিত হইয়াছে। ইহার পর, এক্ষণে একদল নূতন সাহিত্যিক শ্রেণী উত্থিত হইয়াছেন। তাঁহারা ‘জন’ ও ‘গণে’র সংবাদ সাহিত্যের মধ্যে দিবার চেষ্টা করিতেছেন। মধ্যবিত্তশ্রেণীর নামক, নায়িকা, কৃষক ও মজুরের জীবন এই সাহিত্যের প্রতিপাদ্য। ইহা বর্জ্জোয়া সাহিত্য নয়, কিন্তু আপেক্ষিক প্রগতিশীল।