স্বামিজীর সহিত হিমালয়ে/নৈনীতাল ও আলমোড়ায়

দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ

নৈনীতাল ও আলমোড়ায়

আসীন— শ্রীমৎ স্বামী বিবেকানন্দ, তদীয় গুরুভ্রাতৃবৃন্দ এবং শিষ্যমণ্ডলী। কতিপয় পাশ্চাত্য অভ্যাগত এবং শিষ্য-ধীরামাতা, জয়া -ও নিবেদিতা তাঁহাদের অন্যতম।
স্থান—হিমালয়।
সময়—১৮৯৮ খ্রীষ্টাব্দের ১১ই হইতে ২০শে মে পর্যান্ত।

 আমরা একটী বড় দল অথবা প্রকৃতপক্ষে দুইটী দল বুধবার সন্ধ্যাকালে হাওড়া ষ্টেশন হইতে যাত্রা করিয়া শুক্রবার প্রাতে হিমালয়ের সম্মুখে উপস্থিত হইলাম। আমাদের কয়েক শত গজ দূরে পর্বতরাজ যেন হঠাৎ সমভূমি হইতে উর্দ্ধে উঠিয়াছেন বলিয়া মনে হইতে লাগিল।

 তিনটী ঘটনা নৈনীতালকে মধুময় করিয়া তুলিয়াছিল— খেতড়ী-রাজকে আমাদের নিকট পরিচিত করিয়া দিয়া আচার্য্যদেবের আহ্লাদ, দুইজন বাইজীর আমাদিগের নিকট সন্ধান জানিয়া লইয়া স্বামিজীর নিকট গমন এবং অন্যের নিষেধ সত্ত্বেও স্বামিজীর তাঁহাদিগকে সাদরে অভ্যর্থনা করা, আর একজন মুসলমান ভদ্রলোকের এই উক্তি: “স্বামিজী, যদি ভবিষ্যতে কেহ আপনাকে অবতার বলিয়া দাবী করেন, স্মরণ রাখিবেন যে আমি মুসলমান হইয়াও তাঁহাদের সকলের অগ্রণী।”

 আর এইখানেই, এই নৈনীতালেই স্বামিজী রাজা রামমোহন রায় সম্বন্ধে অনেক কথা বলেন, তাহাতে তিনি তিনটী বিষয় এই আচার্য্যের শিক্ষার মূলসূত্র বলিয়া নির্দেশ করেন—তাঁহার বেদান্ত-গ্রহণ, স্বদেশপ্রেম-প্রচার এবং হিন্দুমুসলমানকে সমভাবে ভালবাসা। এই সকল বিষয়ে রাজা রামমোহন রায়ের উদারতা ও ভবিষ্যদ্দর্শিতা যে কার্য্যপ্রণালীর সূচনা করিয়াছিল, তিনি নিজে মাত্র তাহাই অবলম্বন করিয়া অগ্রসর হইয়াছেন বলিয়া দাবী করিতেন।

 নর্ত্তকীদ্বয়-সংক্রান্ত ঘটনাটা আমাদের নৈনী-সরোবরের শিরোভাগে অবস্থিত মন্দিরদ্বয়দর্শন-উপলক্ষে ঘটিয়াছিল। এই দুইটী মন্দির স্মরণাতীত কাল হইতে তীর্থরূপে ক্ষুদ্র রম্য ‘নৈনীতালে’র পবিত্রতা সম্পাদন করিয়া আসিয়াছে। এইস্থানে আমরা দুইজন বাইজীকে পূজায় রত দেখিলাম। পূজান্তে তাহারা আমাদের নিকট আসিল এবং আমরা ভাঙ্গা ভাঙ্গা ভাষায় তাহাদের সহিত আলাপ করিতে লাগিলাম। আমরা তাহাদিগকে নৈনীতাল সহরের কোন সম্ভ্রান্ত বংশের রমণী বলিয়া ভুল করিয়াছিলাম এবং স্বামিজী তাহাদিগকে তাড়াইয়া দিতে অস্বীকার করার উপস্থিত জনমণ্ডলীর মনোমধ্যে যে একটা আন্দোলন চলিয়াছিল তাহা তখন লক্ষ্য না করিলেও পরে জানিতে পারিয়া অতীব বিস্মিত হইয়াছিলাম। আমার যতদূর স্মরণ হয়, খেতরীর বাইজীর যে গল্প তিনি বারম্বার করিতেন তাহা প্রথমবার সম্ভবতঃ এই নৈনীতালের বাইজীদের প্রসঙ্গেই বলিয়াছিলেন। সেই খেতরীর বাইজীকে দেখিতে যাইবার নিমন্ত্রণ পাইয়া তিনি ক্রুদ্ধ হইয়াছিলেন, কিন্তু পরিশেষে অনেক অনুরোধে তথায় গমন করেন এবং তাহার সঙ্গীত শ্রবণ করেন―

“প্রভু মেরা অবগুণ চিত ন ধরো,
সমদর্শী হৈ নাম তুম্‌হারো।
এক লৌহ পূজামে রহত হৈ,
এক রহে ব্যাধ ঘর পরে।
পারশকে মন দ্বিধা নেহী হোয়,
দুঁহু এক কাঞ্চন করে।।
এক নদী এক নহর বহত মিলি নীর ভয়ো।
জব মিলে তব এক বরণ হোয়, গঙ্গানাম পরো।।
এক মায়া এক ব্রহ্ম কহত সুরদাস ঝগরো।
অজ্ঞানসে ভেদ হৈ, জ্ঞানী কাছে ভেদ করো।।”

 অতঃপর আচার্যদেব নিজ মুখে বলিয়াছেন, যেন তাঁহার চক্ষের সম্মুখ হইতে একটা পর্দ্দা উঠিয়া গেল এবং সবই এক বই দুই নহে—এই উপলব্ধি করিয়া তিনি তারপর আর কাহাকেও মন্দ বলিয়া দেখিতেন না। [এই মন্দির-দর্শন-সংক্রান্ত ঘটনাটি পরে জয়া অপর একজনের নিকট শ্রবণ করেন; বক্তা তখন সমবেত স্ত্রীমণ্ডলীকে ওজস্বিনী হৃদয়স্পর্শিনী ভাষায় উপদেশ দিতেছিলেন–সে ভাষা প্রেম ও কোমলতা-পূর্ণ ছিল; উহাতে সকলের প্রতি সমদৃষ্টির ভাব বিদ্যমান ছিল, তিরস্কারের চিহ্নমাত্র ছিল না।]

 যখন আমরা নৈনীতাল হইতে আলমোড়া যাত্রা করিলাম তখন বেলা পড়িয়া আসিয়াছে এবং বনপথ অতিবাহন করিতে করিতেই রাত্রি হইয়া গেল। আমরা রাস্তা ধরিয়া বরাবর চলিতে লাগিলাম; রাস্তা কোথাও খুব নীচু (তথায় জলস্রোতে খাদ পড়িয়া গিয়াছে), তারপরই আবার উঁচু; কোথাও আবার কোণা-বাহিরকরা পাহাড় ঘুরিয়া গিয়াছে; কিন্তু সর্ব্বত্রই বিশালদ্রুমরাজিচ্ছায়াবহুল। ব্যাঘ্র-ভল্লুকাদি দূরে রাখিবার জন্য সমস্ত পথ আমাদের আগে আগে মশাল ও লণ্ঠন চলিয়াছে। যতক্ষণ বেলা ছিল, আমরা গোলাপ বন, ঝরণার আশেপাশে সরু সরু পাতাওয়ালা একজাতীয় ফার্‌ন এবং বন্য দাড়িম্বের ঝোপে লাল লাল কুঁড়িগুলি দেখিতে দেখিতে চলিয়াছিলাম; কিন্তু নিশাগমে ইহাদের এবং হনিসাক্‌লের কেবল গন্ধই আমাদের অবশিষ্ট রহিল। নৈশ নিস্তব্ধতা, ক্ষীণ নক্ষত্রালোক এবং পর্বতমালার ভাবগাম্ভীর্য্য ব্যতীত অপর কিছুই উপলব্ধি করিতে না পারিলেও আমরা সানন্দে ক্রমাগত অগ্রসর হইয়া অবশেষে পাদপান্তরালে পর্বতগাত্রে অপরূপভাবে স্থাপিত একটী ডাকবাঙ্গলায় পৌঁছিলাম। স্বামিজী কিয়ৎক্ষণ পরে দলবলসহ তথায় পৌঁছিলেন। তাঁহার বদন আনন্দোৎফুল্ল, স্বীয় অতিথিগণের স্বাচ্ছন্দ্যবিধায়ক প্রত্যেক খুঁটনাটির দিকে তাঁহার পূর্ণ দৃষ্টি, আর সর্ব্বোপরি বাহিরের অপার্থিব ‘নৈশ দৃশ্যাবলীর’ কবিত্বে ভরপূর—নিজ নিজ অগ্নিকুণ্ডের পাশে উপবিষ্ট কুলিসংঘ, অশ্বগণের হ্রেষারব, অদুরস্থ ধরমশালা, তরুরাজির সন্ সন্ শব্দ এবং অরণ্যানীর গভীরভাবোদ্দীপক তমিস্রা।

 প্রাতরাশের সময় আমাদের গৃহে আসিয়া কয়েক ঘণ্টা কথা-বার্ত্তায় কাটাইয়া দেওয়া স্বামিজীর পুরাতন অভ্যাস ছিল। আমাদের আলমোড়া পৌঁছিবার দিন হইতেই স্বামিজী এই অভ্যাস পুনরায় সুরু করিলেন। তখন (এবং সকল সময়েই) তিনি অতি অল্প সময় ঘুমাইতেন এবং মনে হয় তিনি যে এত প্রাতে আমাদের নিকট আসিতেন, তাহা অনেক সময় আরও সকালে সন্ন্যাসিগণের সহিত তাঁহার এক প্রস্থ ভ্রমণ শেষ করিয়া ফিরিবার মুখে। কখনও কখনও, কিন্তু কালেভদ্রে আমরা বৈকালেও তাঁহার দেখা পাইতাম, হয় তিনিই বেড়াইতে বাহির হইতেন, নয় ত আমরা নিজেরাই তিনি যেখানে দলবলসহ অবস্থান করিতেছিলেন সেই কাপ্তেন সেভিয়ারের গৃহে যাইয়া তাঁহার সহিত দেখা করিতাম। একদিন মাত্র অপরাহ্ণে তিনি আমাদের সহিত সাক্ষাৎ করিতে আসিয়াছিলেন।

 আলমোড়ার এই প্রাতঃকালীন কথোপকথনগুলিতে একটী নূতন এবং অননুভূতপূর্ব্ব ব্যাপার আসিয়া জুটিয়াছিল। উহার স্মৃতি কষ্টকর হুইলেও শিক্ষাপ্রদ। একপক্ষে যেমন এক নূতনতর রকমের আশাভঙ্গ ও অবিশ্বাসের ভাব, অপরপক্ষেও তেমনি বিরক্তি ও বলপরীক্ষার ভাব যেন দেখা দিয়াছিল। পাঠকের স্মরণ রাখা উচিত যে, স্বামিজীর তদানীন্তন শিষ্যগণের মধ্যে কনিষ্ঠ ছিলেন একজন ইংরেজ রমণী এবং চিন্তাপ্রণালী হিসাবে এই ব্যাপারের গুরুত্ব কতদূর, কত প্রবল পক্ষপাতিত্ব লইয় ইংরেজগণ ভারতকে বুঝিতে চাহেন ও তাঁহারা নিজ জাতি, নিজেদের কৃর্ত্তি-কলাপ এবং ইতিহাসকে কিরূপ অন্ধ গৌরবের চক্ষে দেখেন—এ বিষয়ে উক্ত শিষ্যাকে মঠে দীক্ষিত করিবার পরদিবস পর্য্যন্ত স্বামিজীর কোনই স্পষ্ট ধারণা ছিল না। সেই দিন স্বামিজী উল্লাসের সহিত তাঁহাকে প্রশ্ন করিয়াছিলেন, “তুমি এখন কোন্ জাতিভুক্তা?” উত্তর শুনিয়া স্বামিজী বিস্মিত হইলেন, দেখিলেন তিনি ইংরেজের জাতীয় পতাকাকে কি প্রগাঢ় ভক্তি ও পূজার চক্ষে দেখেন; দেখিলেন যে একজন ভারতীয় রমণীর তাঁহার ইষ্টদেবতার প্রতি যে ভাব, ইহারও এই পতাকার প্রতি অনেকটা সেই ভাব। স্বামিজীর তাৎকালিক বিস্ময় এবং আশাভঙ্গ বাহিরে প্রকাশ পাইল না বলিলেও হয়। একটা বিস্ময়ের চাহনি মাত্র, আর কিছুই নহে এবং উক্ত শিষ্যা কিরূপ ভাসা ভাসা ভাবে তাঁহার দলভুক্ত হইয়াছেন ইহা জানিতে পারিলেও বঙ্গভূমে অবস্থানের বাকী কয় সপ্তাহে তাঁহার আস্থা ও সৌজন্যের কিছুমাত্র হ্রাস হয় নাই। কিন্তু আলমোড়ায় আসিয়া যেন এক নূতন পাঠ লওয়া সুরু হইয়াছে বলিয়া বোধ হইতে লাগিল এবং পাঠশালার শিক্ষা ও শাসন যেমন শিক্ষার্থীর প্রায়ই অপ্রীতিকর হয়, তেমনি এখানেও উহা বৎপরোনাস্তি কষ্টসাধ্য হইলেও, কোনও আদর্শকে অসম্পূর্ণভাবে আয়ত্ত করা যে সর্ব্বথা পরিহার্য্য তাহা হৃদয়ঙ্গম হইল। একটী মনকে তাহার স্বাভাবিক ভারকেন্দ্র ত্যাগ করাইতে হইবে। এর চেয়ে আর বেশী কিছুই করা হয় নাই, কখনও কোন ধারণা বা মত জোর করিয়া চাপান হয় নাই, শুধু একদেশিতা হইতে দূরে রাখিবার চেষ্টা হইয়াছিল মাত্র। এই ভীষণ পরীক্ষার অন্তেও স্বামিজী শিষ্যার নূতন বিশ্বাস এবং মত কিরূপ দাঁড়াইল এ বিষয়ে জানিতেও চাহেন নাই এবং যেখানে জাতি ও দেশ সংশ্লিষ্ট, সে সকল ক্ষেত্রে শিক্ষার কোনরূপ জবরদস্ত প্রণালী আর কখনও অবলম্বিত হয় নাই। স্বামিজী সমস্ত ব্যাপারটীর আর আদৌ উল্লেখ করেন নাই। তাঁহার শ্রোত্রীও অতঃপর নিষ্কৃতি পাইলেন। কিন্তু তাঁহার চিন্তাপ্রণালী ও অনুভূতিগত পার্থক্য এরূপ পূর্ণ ও প্রবলভাবে প্রকাশ পাইয়াছিল যে, শিষ্যার পক্ষে মানসিক রাজ্যে নিশ্চেষ্ট হইয়া থাকা অসম্ভব হইয়াছিল এবং অবশেষে নিজের চেষ্টায় তিনি এরূপ একটি ভাব ও আদর্শ আবিষ্কার করিলেন, যাহা এই উভয়বিধ আংশিক মতের ন্যায়সঙ্গত সমন্বয় এবং ব্যাখ্যাস্বরূপ। বহু সপ্তাহ পরে একবার কোন ঘটনা সম্বন্ধে উক্ত শিষ্যার নিরপেক্ষ মত জানিবার চেষ্টা করিয়া যারপর নাই বিফল-মনোরথ হইয়া স্বামিজী বলিয়া উঠিয়াছিলেন, “বাস্তবিকই তোমার যেরূপ স্বজাতিপ্রেম, উহা ত পাপ! অধিকাংশ লোকই যে স্বার্থের প্ররোচনায় কার্য্য করিয়া থাকে—আমি চাই তুমি এইটুকু বুঝ, কিন্তু তুমি ক্রমাগত ইহাকে উল্টাইয়া দিয়া বলিয়া থাক যে, একটী জাতিবিশেষের সকলই দেবতা। অজ্ঞতাকে এরূপে আঁকড়াইয়া ধরিয়া থাকা ত দুষ্টামি!” আর একটি বিষয় অর্থাৎ স্ত্রীজাতির প্রতি পাশ্চাত্ত্যগণের আধুনিক ধারণা সম্বন্ধে এই শিষ্যা মহা একগুঁয়েমির পরিচয় দিয়াছিলেন। মনের যে উদার ও নিঃস্বার্থ অবস্থার লোক সত্যকে আগ্রহের সহিত গ্রহণ করে তাহার তুলনায়, এই উভয় স্থলে নিজ সীমাবদ্ধ সহানুভূতির প্রকাশ এখন এই শিষ্যার নিকট খুব তুচ্ছ ও হীন-বুদ্ধিপ্রস্থত বলিয়া মনে হয়। কিন্তু সে সময়ে যেন ঐ সংকীর্ণতা বাস্তবিকই গন্তব্যপথের এক মহাবিঘ্নস্বরূপ হইয়া দাঁড়াইয়াছিল, এবং তাঁহার সামনে যে আদর্শ মানবত্বের অভিনয় হইতেছিল, তাহাতে কোন কিছুর আড়াল পড়িতে দেওয়া যে নির্ব্বুদ্ধিতা তাহা হৃদয়ঙ্গম না করা পর্যন্ত ঐ বিঘ্ন অপসারিত হয় নাই। একবার এইটি বুঝিবার পর, যে সকল বিষয় তিনি মানিয়া লইতে বা বুঝিতে অক্ষম হইতেন, সেগুলির প্রতি তিনি সহজেই নিরপেক্ষ থাকিতে এবং তত্তৎসম্বন্ধে চরম সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া কালসাপেক্ষ, ভাবিয়া নিশ্চিত থাকিতে পারিতেন। প্রতি ক্ষেত্রেই কোন না কোন পূর্ব্বদংস্কার ও আদর্শ তাঁহার মনকে অধিকার করিয়া সহানুভূতির অবাধগতিকে ব্যাহত করিত। আর চিরকাল এইরূপই ত ঘটিয়া থাকে। যুগবিশেষের পূজার্হ ভাবগুলিই পরবর্ত্তী যুগের চরণ-শৃঙ্খল গড়িয়া থাকে।

 সুতরাং আলমোড়ার এই প্রাতঃকালীন আলোচনাসমূহ আমাদের সামাজিক, সাহিত্যিক ও ললিতকলা-বিষয়ক বদ্ধমূল পূর্ব্ব সংস্কারগুলির সহিত সঙ্ঘর্ষের আকার ধারণ করিত, অথবা তাহাতে ভারতীয় এবং ইউরোপীয় ইতিহাস ও উচ্চ উচ্চ ভাবের দীর্ঘ তুলনা চলিত এবং অনেক সময় অতি মূল্যবান প্রাসঙ্গিক মন্তব্যও শুনিতে পাইতাম। স্বামিজীর একটি বিশেষত্ব এই ছিল যে, কোন দেশবিশেষ বা সমাজবিশেষের মধ্যে অবস্থানকালে তিনি উহার দোষগুলিকে প্রকাশ্যে এবং তীব্রভাবে সমালোচনা করিতেন কিন্তু তথা হইতে চলিয়া আসিবার পর যেন সেখানকার গুণ ভিন্ন অন্য কিছুই তাঁহার মনে নাই, এইরূপই বোধ হইত; তিনি সর্ব্বদাই তাঁহার শিষ্যগণকে পরীক্ষা করিতেন এবং উল্লিখিত চর্চ্চাগুলিতে যে রীতি অবলম্বিত হইয়াছিল, সম্ভবতঃ একজনের—যিনি স্ত্রীলোক আবার ইউরোপবাসিনী ছিলেন তাঁহার—সাহস ও অকপটতা পরীক্ষা করিয়া লইবার উদ্দেশ্যেই ঐ রীতির বিশেষত্ব।