বিবিধ কথা
আড়াই টাকা
ভাদ্র ১৩৪৮
মিত্র ও ঘোষ, ১০, শ্যামাচরণ দে স্ট্রীট, কলিকাতা হইতে শ্রীগজেন্দ্রকুমার
মিত্র কর্তৃক প্রকাশিত ও শনিরঞ্জন প্রেস, ২৫
কলিকাতা হইতে শ্রীসৌরীন্দ্রনাথ দাস কর্তৃক মুদ্রিত।
শ্রীযুক্ত কেদারনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়
শ্রীচরণেষু
সূচী।
১ |
২১ |
৩১ |
৫৬ |
৮৪ |
১০৪ |
১৩১ |
১৭০ |
১৮৮ |
২১৩ |
মুখবন্ধ
আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অমুশীলন কালে, আমি বাঙালী জাতির সংস্কৃতি ও সাধনার, এবং তাহার অতিশয় বর্ত্তমান লক্ষণ সম্বন্ধে মাঝে মাঝে যে সকল ভাবনা ভাবিয়াছি, এবং যাহা এতদিন সাময়িক পত্রিকার পৃষ্ঠা আশ্রয় করিয়া ক্রমশ পাঠক-লোচনের বহির্ভূত হইয়া পড়িতেছিল, তাহারই কতকগুলি উদ্ধার করিয়া এই গ্রন্থে সংগ্রহ করিলাম। এ আলোচনাও সাহিত্য-চিস্তার বহির্ভূত নয়; কারণ, প্রথমত, যে-কোন সাহিত্যের সহিত পরিচয় করিতে হইলে, তাহার পারিপাশ্বিক আবহাওয়ার—সেই কালে সেই সমাজের অন্তস্তলে প্রবাহিত সর্ব্ববিধ ভাবধারার—সংবাদ লইতে হয়। শুধুই কবি ও সাহিত্যিক নয়, অন্যান্য ক্ষেত্রেও যে সকল বিশিষ্ট ভাবুক, মনীষী ও কর্ম্মীগণের আবির্ভাব হইয়া থাকে, তাঁহাদের সাধনা ও ব্যক্তি-চরিত লক্ষ্য না করিলে, জাতির সাহিত্যিক আত্মপ্রকাশকেও বুঝিয়া লওয়া যায় না। এই গ্রন্থের দুই একটি প্রবন্ধ বাদে, আর সকলগুলিতে সেই সাহিত্যিক জিজ্ঞাসার বশে, বর্ত্তমান বাঙালী-জীবনের ভিতর-বাহিরের কিঞ্চিৎ পরিচয় সাধনের চেষ্টা আছে; কথাগুলি বিবিধ হইলেও তাহাদের মূলে সেই একই উৎকণ্ঠার আভাস পাওয়া যাইবে। ‘সত্য ও জীবন’, ‘দুঃখের স্বরূপ’, এবং ‘মৃত্যুদর্শন’—এই তিনটি রচনায় কোন বিশেষের ভাবনা নাই— থাকিলেও, তাহা, বাহিরের জীবন অথবা সাহিত্যের সহিত দূরসম্পর্কিতও নয় বলিয়া মনে হইবে। তথাপি, এগুলির মধ্যে যে সকল চিন্তাগ্রন্থি মোচন্ করিবার প্রয়াস আছে—তাহা সকল মানুষেরই আত্মচেতনার মূলে বিদ্যমান। সাহিত্যই হউক, কিংবা অপর যে-কোন সাক্ষাৎ চিন্তা বা সমস্যার বস্তুই হউক—সেই সকলের মূল্য শেষ পর্য্যন্ত যে আমাদের আধ্যাত্মিক ভাব ও অভাবের দ্বারাই নিরূপিত হয়, তাহ স্বীকার করিতেই হইবে। আমি এই কয়টিতে সেই ভাব ও অভাবের সম্বন্ধে যতটুকু আলোচনা যে ভাবে করিয়াছি তাহাতে আমার প্রাণকেই প্রামাণ্য করিয়াছি, অর্থাৎ, তাহা একান্তই ব্যক্তিগত ধ্যান-কল্পনার ফল; এজন্য, এগুলিকে খাঁটি ‘রচনা’ হিসাবেই আমি পাঠকগণের প্রাণের ঠিকানায় পাঠাইয়া দিলাম।
‘বাঙালীর অদৃষ্ট’ শীর্ষক যে প্রবন্ধটি সর্বশেষে সন্নিবিষ্ট হইয়াছে, তাহার সম্বন্ধেও দুই একটি কথা বলিবার আছে। এই প্রবন্ধে আমি যাহা লিখিয়াছি, তাহা আদে ঐতিহাসিক গবেষণা নয়; আমি ইহাতে জাতিহিসাবে বাঙালীর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য-নির্ণয়ের যে চেষ্টা করিয়াছি, সে পক্ষে—ধর্ম্ম, সমাজ, ও সাহিত্যে তাহার অন্তর্জীবনের যে ধারা আজিও সমান বহিয়া চলিতেছে, এবং গত শতাব্দীতে প্রবল পরধর্ম্মের সহিত প্রথম সংঘর্ষে তাহার যে পরিচয় আরও পরিস্ফুট হইয়া উঠিয়াছে—তাহার উপরেই প্রধানত নির্ভর করিয়াছি। সেই চরিত্রের সকল লক্ষণ মিলাইয়া দেখিবার সামর্থ্য বা অবকাশ আমার হয় নাই; তথাপি, আমার বিশ্বাস, বাঙালীর যে ইতিহাস এখনও লেখা হয় নাই—সেই ইতিহাস যখন সম্পূর্ণ তথ্য-প্রমাণ সহকারে লিখিত হইবে; যখন, আমি যাহাকে 'অদৃষ্ট’ বলিয়াছি তাহা ‘দৃষ্ট’ হইবে, তখন ভিন্ন উপায়ে লব্ধ আমার এই জ্ঞান ভ্রান্ত ধারণাপ্রসূত বলিয়া মনে হইবে না। ইদানীস্তন কালে যে কয়টি অনন্যসাধারণ প্রতিভায় জাতির সেই বৈশিষ্ট্য অতিশয় লক্ষণীয় হইয়া উঠিয়াছে, আমি তাহাদের যে ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ করিয়াছি, তাহা যদি কোন অংশে যথার্থ হইয়া থাকে, তবে আশা করি, আমার এই আলোচনা ব্যর্থ হয় নাই। এই প্রসঙ্গে রবীন্দ্র-প্রতিভার ফলাফল সম্বন্ধে আমি যাহা সিন্ধান্ত করিয়াছি, তাহাতে অনেকেই ক্ষুব্ধ হইবেন জানি, কিন্তু মনে রাখিতে হইবে যে, আমি এ প্রবন্ধে—যেমন অন্যত্র বহু প্রসঙ্গে —রবীন্দ্রনাথের কবিত্ব বা ব্যক্তিপ্রতিভার মূল্য নির্দ্দেশ করি নাই। বাঙালীর জাতি-ধর্ম্মের বিকাশে এবং তাহার যুগোচিত সংস্কৃতি-সাধনে সেই প্রতিভা কিরূপ কার্য্যকরী হইয়াছে, তাহারই একটা ইঙ্গিতমাত্র করিয়াছি; এবং তাহাতেও আমি আমার আনুপূর্ব্বিক চিন্তা-ধারারই বশ্যতা স্বীকার করিয়াছি। আমার সেই সিদ্ধান্ত অপ্রিয় হইতে পারে— কিন্তু যদি তাহা যুক্তিবিরুদ্ধও হয়, তবে সমগ্র আলোচনাই নিস্ফল হইয়াছে। এ যুগ ব্যক্তি-প্রাধান্যের ও বিশ্বমানবতার (দুই-ই মূলে এক) যুগ। এ জন্য আজকাল অনেকেই জাতিগত বৈশিষ্ট্য বলিয়া কিছুকে স্বীকার করেন না; তাহা ছাড়া, বাঙালীর আবার এমন কি বৈশিষ্ট্য আছে যাহা গুরুতর আলোচনা বা গণনার যোগ্য হইতে পারে—এমন প্রশ্ন আমাকে অনেকেই করিয়াছেন। এই শ্রেণীর আধুনিক পণ্ডিতগণের মানস-অভিমান তৃপ্ত করিবার দুরাশা আমার নাই; কিন্তু বাঙালীর চরিত্রে ও বাঙালীর ভাবনা-সাধনায় যে একটি সুস্পষ্ট স্বাতন্ত্র্য আছে, এই প্রবন্ধে তাহার কথঞ্চিৎ প্রমাণ দিতে পারিয়াছি বলিয়া আমার বিশ্বাস।
বাকি দুই একটি প্রবন্ধ ‘বিবিধ কথা’র বিবিধত্বেরই নিদর্শন।
নীলক্ষেত, রমনা |
শ্রীমোহিতলাল মজুমদার |
এই লেখাটি বর্তমানে পাবলিক ডোমেইনের আওতাভুক্ত কারণ এটির উৎসস্থল ভারত এবং ভারতীয় কপিরাইট আইন, ১৯৫৭ অনুসারে এর কপিরাইট মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে। লেখকের মৃত্যুর ৬০ বছর পর (স্বনামে ও জীবদ্দশায় প্রকাশিত) বা প্রথম প্রকাশের ৬০ বছর পর (বেনামে বা ছদ্মনামে এবং মরণোত্তর প্রকাশিত) পঞ্জিকাবর্ষের সূচনা থেকে তাঁর সকল রচনার কপিরাইটের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে যায়। অর্থাৎ ২০২৪ সালে, ১ জানুয়ারি ১৯৬৪ সালের পূর্বে প্রকাশিত (বা পূর্বে মৃত লেখকের) সকল রচনা পাবলিক ডোমেইনের আওতাভুক্ত হবে।