চিদ্বিলাস
চিদ্বিলাস

(দর্শন পরিচয়)

শ্রী বিনয় কুমার সান্যাল বি,এ,

প্রণীত



গুরবে ভাস্কর-স্বরূপায় নমঃ
ওঁ শিবময়ং জগৎ।


চিদ্বিলাস।

(দৰ্শন পরিচয়)

শ্রীবিনয়কুমার সান্যাল বি, এ, প্রণীত।

কলিকাতা

২২ নং রাধানাথ মল্লিকের লেন হইতে

শ্রীযুক্ত ক্ষেত্রচন্দ্র বসু মল্লিক দ্বারা

প্রকাশিত।

বঙ্গাব্দ ১৩১৫।

মূল্য।৹ আনা মাত্র।


কলেজ স্কোয়ার, জে, এন, বসু দ্বারা মুদ্রিত

ভুমিকা।

  বহু দিবস হইতে মনে মনে একটি ইচ্ছা হইতেছিল যে সমস্ত দর্শনগুলির একটি সার সহজ ভাষাতে লিখিয়া রাখিয়া মাঝে মাঝে তাহা দেখিয়া ভোলামনকে একটু একটু করিয়া পথ্য দিব। কিন্তু মনের স্বভাবই এই যে একটি সংকল্প বা ভাব আর একটি সংকল্প বা ভাবকে জাগাইয়া তোলে। মনে হইয়াছিল যে কেবল আমারই সুবিধার জন্য কথা কয়েকটি লিখিয়া রাখি, কিন্তু এখন আবার মনে হইতেছে যে এমন সুধারস কেন সকলের সহিত বাঁটিয়া পান করি না! মনে হইতেছে দেশে অনেকে ত আছেন যাঁহারা সংস্কৃত জানেন না, অথবা যাঁহাদের সমগ্র দর্শন শাস্ত্র পাঠ করিবার অবসর নাই, আজ এই আনন্দবার্ত্তা তাহাদের দ্বারে উপস্থিত করি। হয় ত অনেক দুঃখতপ্ত হৃদয় আছে, যাহাতে দর্শনাম্বুধির দুই একটি বিন্দু পড়িলে একেবারে জুড়াইয়া যাইবে, তাই এই চিদ্বিলাস গ্রন্থ সকলের নিকট উপস্থিত করা হইল।

 বলা বাহুল্য ইহাতে আমার নিজের বিদ্যা বুদ্ধির কিছুই নাই। যাহা যাহা দেখা বা শুনা হইয়াছে তাহারই কিছু কিছু ইহাতে প্রকাশিত হইয়াছে—দর্শনরূপ মহা জলধির মধ্যে যে কত রত্ন আছে ইহাতে তাহার কিঞ্চিৎমাত্র আভাস দেওয়া হইল।

 কৃতজ্ঞতার সহিত প্রকাশ করিতেছি যে কাশী নিবাসী পণ্ডিত শ্রীযুক্ত রঘুবীর ত্রিবেদী মহাশয় এই পুস্তক প্রণয়ন বিষয়ে বিশেষ সাহায্য করিয়াছেন, এবং ইহার পাণ্ডুলিপি কাশীস্থ ছয় জন খ্যাতনামা পণ্ডিতের দ্বারা সংশোধিত ও অনুমোদিত হইয়াছে। এক্ষণে ইহা সাধারণের উপকারে আসিলে শ্রম সফল জ্ঞান করিব।


মঙ্গলাচরণ।

দুর্জ্ঞেয় তোমার তত্ত্ব করিতে প্রকাশ,
হে অচিন্ত্য! কত জন করেছে প্রয়াস।
সাংখ্যকার, পতঞ্জলি, লইয়া কুসুমাঞ্জলি,
হৃদয়ের ভক্তিভরে আকুল হুইয়া,
দিয়াছেন তবপদে “প্রকৃতি” ভাবিয়া!

আবার ওদিকে দেখি ন্যায় বৈশেষিক,
ভাবিয়া চিন্তিয়া শেষে করিয়াছে ঠিক,
পরমানুময় তুমি,  হে অনন্ত বিশ্বস্বামী!
সেই পরমাণু হতে বিশ্বের উদ্ভব,
অনিল, জলধি, জীব চরাচর সব।

বেদবিদ্যা পরায়ণ মহর্ষি জৈমিনি,
কর্ম্মরূপে তোমাকেই জেনেছেন তিনি।
ধর্ম্মবীর রামানুজ,  তোমারি চরণাম্বুজ,
করেছেন পরকাশ “বিশেষণ” বলি,
পূজেছেন ভক্তিভরে নেত্রনীরে গলি।

রুদ্রবীর্য্য অবতংস ব্রহ্মচর্য্যপর,
আর্য্যকুল-ধুরন্ধর, মহর্ষি শঙ্কর,
গম্ভীর জীমূতনাদে, পুনঃ ঘোর মায়া বাদে,
তোমারি স্বরূপতত্ত্ব করিবারে স্থির,
আসমুদ্র হিমাচল ভ্রমিয়াছে ধীর।

তুমি সেই এক(ই) ব্যক্তি পুরুষ প্রধান,
ভিন্নরূপে এরা যার করেছে সন্ধান,
বর্ণনে বিভিন্নমাত্র, এক(ই) কিন্তু মূল সূত্র,
অন্ধ যথা করীপৃষ্ঠ করি পরশন,
ভিন্ন ভিন্নরূপে তার কহে বিবরণ।

হে অনন্ত, বিশ্বনাথ, অব্যক্ত অব্যয়,
তোমার স্বরূপতত্ত্ব করিতে নির্ণয়
ভেদ এত ঋষিদের;  ক্ষুদ্রবুদ্ধি মানবের;
এ দুরূহ তত্ত্ব দেব? বলিবে কেমনে!
অক্ষম মানব এই তত্ত্ব নিরূপণে।

কেহ বলে তুমি “ব্রহ্ম” কেহ বা “ঈশ্বর”,
কেহ বলে “পরমাত্মা” তুমি অনশ্বর;
কেহ তাতে বাধা দেয়; জানেনা মানব হায়!

কত ক্ষুদ্র বুদ্ধিতার! ক্ষুদ্র জ্ঞানে কবে
অনন্তের অনুমান জগতে সম্ভবে?

সনাতন হিন্দুধর্ম্ম শ্রুতির বিধানে,
নিয়োজিত সততই তোমার সন্ধানে,
আমাদের শ্রুতিমূলে সেই শ্রুতি সদা বলে
ঈশ্বরে বিশ্বাস নর! রাখহ প্রচুর,
বিশ্বাসে পাইবে বস্তু তর্কে বহুদূর।

ঈশ্বরে বিশ্বাস রাখি হৃদয়ের তলে,
অমৃতত্ব লভ জ্ঞান, ভক্তি, কর্ম্মবলে;
বিনা জ্ঞান, কর্ম্ম, ভক্তি, সাধনাতে অনুরক্তি,
পাবেনা পাবেনা কভু মুক্তির সন্ধান।
সাধক! ইহাই মাত্র মুক্তির সোপান।

Cover Printed at the

Bee Press

এই লেখাটি বর্তমানে পাবলিক ডোমেইনের আওতাভুক্ত বলে অনুমান করা হচ্ছে কারণ এটির উৎসস্থল ভারত এবং ভারতীয় কপিরাইট আইন, ১৯৫৭ অনুসারে এর প্রথম প্রকাশের ৬০ বছর পর পঞ্জিকাবর্ষের সূচনা থেকে কপিরাইটের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে যায়। অর্থাৎ ২০২৪ সালে, ১ জানুয়ারি ১৯৬৪ সালের পূর্বে প্রকাশিত সকল রচনা পাবলিক ডোমেইনের আওতাভুক্ত হবে।

বিঃদ্রঃ এই লেখা/রচনা/বইয়ের লেখকের মৃত্যুসাল কোনও তথ্যসূত্র দ্বারা প্রতিষ্ঠিত নয়। ভবিষ্যতে কোনো তথ্যসূত্র দ্বারা লেখকের মৃত্যুসাল সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশে এলে, এই লেখকের রচনার প্রকৃত কপিরাইট অবস্থা যাচাই করা সম্ভব হবে। নতুন তথ্য অনুসারে এই বইটির কপিরাইট অবস্থা ভবিষ্যতে বিচার করে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এই লেখাটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাবলিক ডোমেইনের অন্তর্গত কারণ এই লেখাটি ১লা জানুয়ারি ১৯২৯ সালের আগে প্রকাশিত। এই লেখাটি আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে কপিরাইটেড হতে পারে। (বিস্তারিত জানার জন্য এই সাহায্য পাতা দেখুন)।